বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর দেওয়া গাইডলাইন অনুযায়ী ডিপ্রেশনকে যে ক’টি বিষয় দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো হলো: দুঃখ, আগ্রহ বা আনন্দ হারিয়ে ফেলা, অপরাধবোধ, নিজেকে মূল্যহীন লাগা, ঘুম ও ক্ষুধায় বিরক্তি, ক্লান্তি, দুর্বল মনোযোগ।
বিভিন্ন কারণে ডিপ্রেশন হতে পারে, হয় জৈবিক কিংবা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে। ডিপ্রেশনের প্রচলিত কিছু কারণ হলো:
মস্তিষ্কের রসায়ন: মস্তিষ্কের যে অংশ মনঃমেজাজ, চিন্তা-ভাবনা, ঘুম, ব্যবহার ইত্যাদি পরিচালনা করে তাতে রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতার কারণে ডিপ্রেশন হতে পারে।
হরমোনের পরিবর্তন: নারীর ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন নামক হরমোনের পরিবর্তন যা মাসিক ঋতুস্রাব, প্রসব পরবর্তী ঋতুস্রাব, পেরিমেনোপজ বা মেনোপজের সময় হয়ে থাকে তা ডিপ্রেশন ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
শারীরিক অসুস্থতা: অনিদ্রা, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, ক্যান্সারসহ দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ব্যথা বা পীড়া: যারা দীর্ঘসময় ধরে মানসিক বা দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক ব্যথা অনুভব করেন তাদের বিষণ্ণতা হওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
পারিবারিক ইতিহাস: পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনের মধ্যে ডিপ্রেশন থাকলে এই রোগ হতে পারে।
শৈশবের ট্রমা (মানসিক আঘাত): খুব ছোটোবেলার কোনো স্মৃতি যা এখনও মনে ভয় ও চাপের সৃষ্টি করে তার কারণে ডিপ্রেশন হতে পারে।
মাদক সেবনের ইতিহাস আপনার ঝুঁকিকে প্রভাবিত করতে পারে।
ডিপ্রেশনের ঝুঁকির কারণ
ওপরে উল্লেখিত কারণ ছাড়াও কিছু কারণ রয়েছে যেগুলো ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এগুলো হলো:
লিঙ্গ: গবেষণায় দেখা গেছে পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে ডিপ্রেশনের প্রকোপ দ্বিগুণ বেশি।
আর্থসামাজিক অবস্থা: আর্থিক সমস্যা, নিম্ন সামাজিক অবস্থা ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
ভিটামিন ডি-এর অভাব ডিপ্রেশনের ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
ওষুধ সেবন: জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, কর্টিকোস্টেরয়েড এবং বিটা ব্লকার-সহ কিছু ওষুধ বিষণ্ণতার বর্ধিত ঝুঁকির সাথে যুক্ত হতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী রোগ: হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ হয় যারা করেন না, অন্যদিকে ক্যান্সারে আক্রান্ত ৪ জনের মধ্যে ১ জনেরও বিষণ্ণতা অনুভব করতে পারে।
মাদক সেবনের ফলেও আপনার ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
এছাড়া প্রিয়জনের মৃত্যু, অসুখী বিবাহিত জীবন, কর্মস্থলের বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমস্যা, একাকীত্ব, ইত্যাদিও মানুষের ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা বাড়িয়ে দিতে পারে।
সবার ক্ষেত্রে ডিপ্রেশনের লক্ষণ যে এক হবে এমনটা নয়। নিজের মনের কথা শুনুন এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো মানসিক স্বাস্থ্যকেও গুরুত্ব দিন। ডিপ্রেশনে থেকে ডিপ্রেশনকে নিয়ে লজ্জা না করে, পরামর্শ করুন কাউন্সেলরের বা থেরাপিস্টের সাথে। এতে নিজের জীবন ভালো কাটবে, অন্যকেও ভালো রাখবেন এবং অনেক জটিল শারীরিক ব্যাধি থেকেও পাবেন মুক্তি।
রেফারেন্স লিঙ্ক:
১। https://www.healthline.com/health/depression#causes
২। https://www.who.int/newsঃroom/factঃsheets/detail/depression
৩। https://www.who.int/newsঃroom/factঃsheets/detail/mentalঃdisorders