মানসিক স্বাস্থ্য

যে চারটি খাবার আপনার উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তাজনিত সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে


বর্তমান সময়ে দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগজনিত মানসিক সমস্যা সারা বিশ্বে প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। শুধুমাত্র আমেরিকাতেই প্রায় ৪০ মিলিয়ন মানুষ এই দুশ্চিন্তাজনিত রোগ বা anxiety-তে ভুগছেন। বাংলাদেশেও এর সংখ্যা নেহাতই  কম নয়। বাংলাদেশের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের হিসেব মতে ১৮ বছর এবং এর চেয়ে অধিক বয়সি মানুষের প্রায় ১৮.৭% এবং ৬০ ও তার অধিক বয়সি মানুষের প্রায় ২০.২% মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় আক্রান্ত । 

দীর্ঘদিন এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকলে ডক্টরের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত এবং পরিমিত ওষুধ সেবনের পাশাপাশি গাইডেড মেডিটেশন করা যেতে পারে।

তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো আপনার এই মানসিক দুশ্চিন্তাজনিত সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।

আসুন জেনে নেই কোন সেই ৪টি খাবার যেগুলো আপনার এনজাইটি-জনিত সমস্যায় এড়িয়ে চলা উচিত: 

১. অ্যালকোহল বা মদজাতীয় নেশাদ্রব্য: সাময়িক প্রশান্তি ও উৎকর্ষতার জন্য গ্রহণ করা এই অ্যালকোহল বা মদই উলটো আমাদের এনজাইটি বা দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিতে পারে। মদ আমাদের শরীরে ঘুমের ব্যাঘাত এবং ডিহাইড্রেশন অর্থাৎ পানিস্বল্পতা ঘটায়। যা কি না এই এনাজাইটি বা উদ্বিগ্নতাকে ট্রিগার করতে পারে। এছাড়া মদ মস্তিষ্কের সেরোটেনিন নামক একটি হরমোন এবং নিউরনের সংবেদনশীলতাকে প্রভাবিত করে, যা আরেকটি কারণ হতে পারে শরীরে দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে তোলার। একারণে অনেকে মদের নেশা কেটে যাওয়ার পর আরও তীব্রভাবে এনজাইটিজনিত সমস্যা অনুভব করে থাকেন। 

২. ক্যাফেইনসকালে ঘুম থেকে উঠেই এক কাপ গরম গরম কফি খেতে অনেকেই খুবই পছন্দ করেন । কিন্তু এই কফিতে বিদ্যমান ক্যাফেইন আমাদের শরীরে এনজাইটিজনিত সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে । এমনকি ক্যাফেইন মস্তিষ্কে নিঃসৃত হওয়া হ্যাপি হরমোন সেরোটোনিনের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমেও বিষণ্ণতা বাড়িয়ে দিতে পারে। পরিমিত মাত্রায় ক্যাফেইন সেবন এজন্য খুবই জরুরি। দিনে ৪০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্যাফেইন গ্রহণ শরীরে কোনো সমস্যা তৈরি করে না বলে জানিয়েছে FDA ( The food & drug administration). এজন্য কফি এবং ক্যাফেইন বিদ্যমান আছে এমন খাবার যেমন চা, চকোলেট ও বিভিন্ন মাথাব্যথার ওষুধ সেবনে সচেতনতা বজায় রাখতে হবে।

৩. Added Sugar বা পরোক্ষভাবে চিনি মিশ্রিত খাবারসমূহ: খাবারকে শতভাগ চিনিমুক্ত রাখা আমাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব কেননা প্রাকৃতিকভাবেই অনেক খাবার এবং প্রায় সকল ফলেই চিনি মিশ্রিত থাকে। তবে আসল সমস্যা হয় সেসব চিনিমিশ্রিত খাবারসমূহে যেগুলোকে প্রত্যক্ষভাবে মনে হয় চিনিবিহীন। কারণ যেহেতু আমরা জানি না সেগুলোতে চিনি মেশানো আছে–আমরা না বুঝেই অনেক বেশি পরিমাণ চিনি গ্রহণ করে ফেলি। যেমন: টমেটো সস, পাস্তা সস, কর্ন ফ্লেকস ইত্যাদি। এই চিনি শরীরে রক্ত চলাচল হুট করে বাড়িয়ে দেয় এবং তাৎক্ষণিক শক্তি প্রদান করে যা কিছুক্ষণ স্থায়ী হওয়ার পর চলে যায়। তখন আমরা আবার বিষণ্ণ ও আলসে অনুভব করতে শুরু করি যা আমাদের এনজাইটি পরোক্ষভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে। এজন্য এ সমস্ত খাবার যতটা সম্ভব আমাদের এগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা উচিত। 

৪. রিফাইনড কার্বস বা প্রক্রিয়াজাত শর্করা : শস্যদানাকে কয়েকধাপ পরিশোধনের মাধ্যমে তৈরি করা হয় এই রিফাইনড কার্বস। উদাহরণ: সাদা ময়দা, সাদা চাল, সাদা রুটি। এছাড়া রিফাইনড কার্বসের অন্তর্ভুক্ত। এই রিফাইনিং বা পরিশোধনের মাধ্যমে শস্যদানা থেকে এর ফাইবার আলাদা করে ফেলা হয়। যা এর পুষ্টিগুণ অনেক কমিয়ে ফেলে। কিছু রিফাইনড কার্বস জাতীয় খাবারের উদাহরণ হলো : সাদা পাউরুটি, সাদা ভাত, বিভিন্ন কেইক ও প্যাস্ট্রিস, তরল পানীয় বা বেভারেজ ড্রিংকস, পাস্তা ও নুডলস এবং বিভিন্ন প্যাকেটজাতীয় তৈরি খাবার। এই রিফাইনড কার্বস জাতীয় খাবার স্থুলতা, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের মতো রোগের সৃষ্টি করে এবং পাশাপাশি এনজাইটি এবং বিষণ্ণতা জাতীয় সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। এজন্য সাদা আটা ও ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার যেন পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করা হয় সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।

তথ্যসূত্র: 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সম্পর্কিত পোস্ট

আরও আরও...আর পাওয়া যায়নি.