মানসিক স্বাস্থ্য

ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় বিভিন্ন থেরাপি যেভাবে কাজ করে 

শরীরের বিভিন্ন রোগের মতনই মনের এক রোগ ডিপ্রেশন। অবসন্ন মন, উৎসাহহীনতা ও শক্তিহীনতা যদি কোনো ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনে দীর্ঘসময় প্রভাব ফেলে তখন বলা যায় তিনি ডিপ্রেশনে রয়েছেন। এবং অন্যান্য রোগের মতনই ডিপ্রেশনের চিকিৎসা করা সম্ভব। লক্ষণের ওপর ভিত্তি করে ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতার বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। 

ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় সাইকোথেরাপি 

সাইকোথেরাপি বা মনোচিকিৎসাকে ‘কথা চিকিৎসা’ বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় একজন দক্ষ থেরাপিস্টের কাছে রোগী নিজের মানসিক অবস্থার কথা প্রকাশ করে করণীয় বিষয়ে জানেন। গবেষণা বলছে, ডিপ্রেশনসহ অন্যান্য মানসিক সমস্যার চিকিৎসা হিসেবে সাইকোথেরাপি বেশ ভালো কাজ করে। এই সাইকোথেরাপিরও আবার কয়েকটি ধরন রয়েছে। একেক জনের ক্ষেত্রে একেক ধরনের সাইকোথেরাপি কার্যকরী ভূমিকা রাখে:

১। জ্ঞানভিত্তিক আচরণীয় থেরাপি (সিভিটি)

এই থেরাপিতে একজন থেরাপিস্ট রোগীর সেই চিন্তাধারাগুলো খুঁজে বের করবেন যা তার ব্যবহার, আচরণ এবং নিজের প্রতি বিশ্বাসে খারাপ প্রভাব ফেলছে। তিনি ধীরে ধীরে রোগীর নিজের প্রতি খারাপ ধারণাগুলোকে ভালোতে রূপান্তরের চেষ্টা করবেন। এই যেমন, ‘আমি এই কাজ করতে পারব না’ এমন ধারণাকে ‘আমার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এই কাজ করতে পারব’-তে নিয়ে যেতে সাহায্য করবেন থেরাপিস্ট।  

২। সাইকোডাইনামিক থেরাপি

এটি সাইকোথেরাপির একটি ধরন যেখানে রোগীর অতীত থেকে শুরু বর্তমান জীবন পুরোটাই থেরাপিস্ট অনুসন্ধান করবেন এবং দিনের পর দিন কীভাবে রোগীর মনের পরিবর্তন হয়েছে, কীভাবে রোগী তা পার করেছেন তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন রোগীর সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে। থেরাপিস্ট সব তথ্য জানার মাধ্যমে রোগীকে সাহায্য করবেন কীভাবে তিনি নিজের জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবেন। 

৩। লাইট থেরাপি 

কৃত্রিম আলোর সাহায্যে ডিপ্রেশনের চিকিৎসা করার যে উপায় তাকেই লাইট থেরাপি বলা হয়। যারা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় বিশেষত শীতকাল যখন দিনের আলো কম থাকে তখন ডিপ্রেশনে ভোগেন কিংবা অন্ধকারে ভয় পান তাদের লাইট থেরাপি দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় রোগীকে নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের নির্দিষ্ট রঙের সামনে রাখা হয়। তবে যাদের চোখ অতিরিক্ত আলো সংবেদশীল তাদের এই থেরাপি না নেওয়া উচিত। 

৪। ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপি (ইসিটি)/ শক থেরাপি 

যাদের ডিপ্রেশন চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তাদের চিকিৎসায় ইসিটি ব্যবহার করা হয়। এই থেরাপিতে রোগীর মস্তিষ্কের কোষগুলোকে উজ্জীবিত করার জন্য তার কপালে খুব অল্প এবং নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে বৈদ্যুতিক প্রবাহ দেওয়া হয়। এই সময়ে রোগীকে অ্যানেস্থেশিয়া দেওয়া হয় যাতে তিনি কোনোকিছু টের না পান। পুরো প্রক্রিয়াটির জন্য ৫-১০ মিনিট সময় লাগে। তবে এই থেরাপি গ্রহণ করলে মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, পেশি ব্যথা ও ক্ষত, বিভ্রান্তি ইত্যাদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। 

৫। ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় মেডিটেশন থেরাপি 

ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায় কাজের চাপ, ভয়, রাগ ইত্যাদি আর মেডিটেশন সাহায্য করে কীভাবে এসব অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পিইউবি মেড সেন্ট্রালের গবেষণা অনুযায়ী, মেডিটেশন ডিপ্রেশনের লক্ষণ কমিয়ে আনতে সাহায্য করে এবং পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস করে।  

এছাড়া ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় আকুপাংচার থেরাপি ব্যবহার করা হয়। এটি একটি প্রাচীন চিনা চিকিৎসাপদ্ধতি যা ডিপ্রেশনের কিছু লক্ষণ সারাতে সাহায্য করে। 

ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা শুধুমাত্র একটি মানসিক ব্যাধি নয় এটি আপনার শরীর, সামাজিক অবস্থান এবং সবকিছু ওলটপালট করে দিতে পারে। হতাশা এবং বিষণ্ণতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগে, অতিসত্বর একজন সাইকোথেরাপিস্টের সাথে কথা বলুন। 

রেফারেন্স লিঙ্ক:

  1. https://www.healthline.com/health/depression#treatment
  2. https://www.healthline.com/health/cognitive-behavioral-therapy
  3. https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5709536/ 
  4. https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/30597302/ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সম্পর্কিত পোস্ট

আরও আরও...আর পাওয়া যায়নি.