শিশুর যত্ন ও বেড়ে উঠা

শিশুদের স্কুলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখব কীভাবে?

‘পৃথিবী বদলে গেছে, যা দেখি নতুন লাগে’! বাংলা এই গানটির সাথে কমবেশি আমরা সবাই পরিচিত। করোনা মহামারির পর আমাদের অবস্থা হয়েছে অনেকটা এরকম। এমন অনেক কিছুর মধ্যে দিয়ে আমাদের যেতে হচ্ছে যা আগে কেউই কখনো ভাবেনি। এর মধ্যে অন্যতম হলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।

অন্য যে-কোনো জায়গার চেয়ে শিশুদের স্কুলে সামাজিক দূরত্ব মানে একে অপরের থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা বেশ চ্যালেঞ্জিং ব্যাপারই বটে। স্কুলের বড়ো একটা কাজ হলো শিশুদের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক সৃষ্টি করানো, নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি এবং এসবের মাধ্যমে সবার বিকাশ ঘটানো। কিন্তু বাঁধ সেধেছে মহামারি। তাই সবাইকেই সামাজিক দূরত্ব মানতেই হবে! শিশুদেরকে নিরাপদ রাখার জন্যও সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করাটা জরুরি।

বলা হয়ে থাকে মানুষ সব থেকে দ্রুত খাপ খাওয়াতে পারে। সামাজিক দূরত্বের ব্যাপারটাও এমন। আশার ব্যাপার হচ্ছে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টা প্রথমে অদ্ভুত মনে হলেও, আমরা সেটা শিখতে বাধ্য হচ্ছি। আর শিশুরা তো এমনিতেই দ্রুত শেখে। তাই স্কুলগুলোতে কিছু সাধারণ বিষয়গুলো মেনে চললে শিশুদেরকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা কিছুটা হলেও সহজ হবে।

শিশুদের স্কুলে সামাজিক দূরত্ব রাখার জন্য যা করা ভালো:

  1. শিশুদেরকে সামাজিক দূরত্ব শেখানোর পেছনে স্কুলের শিক্ষক এবং বড়োদের ভূমিকা অনেক বেশি। বলা হয়ে থাকে শিশুরা বড়োদেরকে দেখেই শেখে। তাই স্কুলগুলোতে শিক্ষক এবং অভিবাবকেরা যদি সামাজিক দূরত্ব মেনে চলেন মানে একে অপরের থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখেন তাহলে শিশুদেরকে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার বিষয়টা মানানো অনেক বেশি সহজ হবে।
  2. প্রতিটি ক্লাসরুমের চেয়ার বা বেঞ্চে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর চিহ্ন এঁকে দেওয়া যেতে পারে। ক্লাসরুম ছাড়াও লাইব্রেরি, ক্যাফে, মিলনায়তনেও একই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। প্রয়োজনে এটি মেনে চলা হচ্ছে কি না তা তদারকির জন্য শিক্ষক এবং ছাত্রদের সম্মিলিত কমিটি গঠন করা যেতে পারে। 
  3. একই ক্লাসকে ভেঙ্গে কয়েকটা সেকশন করা যেতে পারে। সব শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে একই দিনে নাও ক্লাস করানো যেতে পারে। 
  4. প্রতিদিন ক্লাসের শুরুতে সামাজিক দূরত্বের কথা মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাটা কেন দরকার সেটাও শিশুদেরকে নিয়মিত মনে করিয়ে দেওয়া জরুরি।
  5. সব শিক্ষার্থী যেন একই গেট দিয়ে ভিড় না করে প্রবেশ করে সেটা লক্ষ রাখতে হবে।  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হবার সময়ও সিঁড়ি, করিডর এবং গেটে ভিড় না হয়ে সেটা খেয়াল রাখতে হবে। দুই ক্লাসের মাঝের সময়টাতে কিংবা স্কুল ছুটির সময় সব ক্লাসকে এক সাথে ছুটি না দিয়ে বরং আগে-পিছে করে ছুটি দিলে স্কুল থেকে বের হবার সময় সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা সহজ হবে।
  6. ক্লাসরুমগুলোতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এতে শিশুদের জটলা করে থাকার প্রবণতা কমবে।
  7. স্কুলে যদি কোনো শিশু কোভিড আক্রান্ত হয় তবে সাথে সাথে তাকে অন্য শিশুদের থেকে আলাদা করতে হবে এবং প্রয়োজনে বাকি শিশুদেরকেও কয়েকদিনের জন্য অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
  8. স্বাস্থ্যবিধির নিয়মগুলো রপ্ত করার জন্য ছোটোখাটো পুরস্কারও রাখা যেতে পারে। শিশুরা খেলতে ভালোবাসে, উপহার এবং পুরস্কার পেতে ভালবাসে। তাদেরকে এসব দিয়ে উদ্‌বুদ্ধ করা উচিত।
  9. স্বাস্থ্যবিধির নিয়মগুলোর আলোকে এবং সেগুলোর উপকারিতাকে গুরুত্ব দিয়ে গল্প, কার্টুন, ব্যানার তৈরি করা যেতে পারে। এ বিষয়ে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতাসহ নানারকমের প্রতিযোগিতাও আয়োজন করা যেতে পারে। উঁচু ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতর্কও আয়োজন করা যেতে পারে।

যেহেতু সমস্যাটি সারা পৃথিবীতেই নতুন, তাই নতুন নতুন সমাধানের পথ খুঁজতে বাধা নেই। শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তাই নিজেদের ভবিষ্যতকে নিরাপদ রাখার জন্য স্কুলগুলোতে স্বাস্থ্যবিধির প্রতিটি ধাপই নিশ্চিত করতে হবে।

https://www.who.int/emergencies/diseases/novel-coronavirus-2019/question-and-answers-hub/q-a-detail/coronavirus-disease-covid-19-schools

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সম্পর্কিত পোস্ট

আরও আরও...আর পাওয়া যায়নি.