খাদ্য-পুষ্টি ও জীবনযাত্রা

মুখ ও পাশের অতিরিক্ত চর্বি কমানোর ৮ উপায়

অনেকেই তাদের মুখ এবং তার চারপাশের গাল, গলা ও ঘাড়ের অংশের জমানো চর্বি কমিয়ে আনতে চান নিজের মুখশ্রী আরেকটু আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য।

বাজারে এমন অনেক ডিজিটাল ডিভাইস এবং স্ট্র্যাপ পাওয়া যায় যেগুলোর নির্মাতার প্রতিষ্ঠান দাবি করে যে সেগুলো মুখমণ্ডলের আশেপাশে জমা অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সক্ষম। কিন্তু বাস্তবতা হলো শরীরের যে-কোনো অংশের জমা চর্বি কমানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে খাদ্যাভাস এবং লাইফস্টাইলের বা জীবনযাত্রায় পরিবর্তন প্রয়োজন।

তবে আশার বিষয় হলো, মুখমণ্ডলের জমা চর্বি কমানোর বেশ কিছু কার্যকরী কৌশল রয়েছে। এমন ৮টি কৌশল সম্পর্কে চলুন জেনে আসি।

১. ফেসিয়াল এক্সারসাইজ বা মুখমণ্ডলের ব্যায়াম:

মুখের ব্যায়াম মুখে অবস্থিত মাসলসমূহকে দৃঢ় করে এবং ত্বকের রিংকেলস (কুঁচকে যাওয়া) দূর করতে পারে।

তাছাড়া কিছু গবেষণায় এটাও প্রকাশ পেয়েছে যে বিভিন্ন ফেসিয়াল এক্সারসাইজ মুখের মাসলকে টোন করতে পারে । যা মুখমণ্ডলকে দেখতে আরও স্লিম করে তোলে। এছাড়া এমন ব্যায়ামগুলো মুখের ত্বককে করে তোলে প্রাণবন্ত এবং তরুণের মতো উজ্বলতা এনে দিতে পারে। 

২. কার্ডিও বা হৃৎপিণ্ড সংশ্লিষ্ট ব্যায়াম:

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মোটা হয়ে যাওয়ার সময় শরীরের বিভিন্ন অংশের পাশাপাশি মুখেও অতিরিক্ত চর্বি জমা হয় । তাই ওজন কমাতে পারলে মুখে জমা চর্বিও এমনিতেই কমে যায়।

কার্ডিও এক্সারসাইজ মূলত সেই সকল ব্যায়াম যা হৃৎপিণ্ডের গতি বাড়ায় এবং ওজন কমানোর জন্য খুবই কার্যকরী। প্রতিদিন ২০- ৪০ মিনিটের মতো কার্ডিও-ই যথেষ্ট। 

হাঁটা, দৌড়ানো, বাই সাইকেলিং, সাঁতার, ড্যান্সিং স্কেটিং, সবই কার্ডিও ব্যায়াম।

৩. যথেষ্ট পানি পান:

পরিমাণমতো পানি পান করা সর্বোপরি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি শরীর ও মুখের অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে।

পানি শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায় এবং শরীরে ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ কমায়। এছাড়া পানি পানে ক্ষুধা কমে যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।

৪. মদ বা নেশাদ্রব্য গ্রহণ বন্ধ করা:

অতিরিক্ত মদ পান শরীর ও মুখে মেদ বা চর্বি জমার কারণ হতে পারে। মদ শরীরে ডিহাইড্রেশন অর্থাৎ পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে যা শরীরকে পানি ধারণ করে রাখতে প্রভাবিত করে। যার ফলে ওজন বাড়তে পারে।

এছাড়া মদ আমাদের ক্ষুধার অনুভূতিতে ব্যাঘাত ঘটায় যা অধিক খাবার গ্রহণের কারণ হতে পারে। 

৫. রিফাইনড কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ কমানো: 

রিফাইনড কার্বস ( সাদা চিনি, সাদা ময়দা , সাদা চাউল ,সাদা রুটি প্রভৃতি) জাতীয় খাবার আমাদের ব্লাড সুগার বাড়িয়ে দিতে পারে। আর হাই ব্লাড সুগার শরীরে অধিক চর্বি জমার অন্যতম একটি কারণ। 

৬. পর্যাপ্ত ঘুম: 

প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শরীরের মেটাবলিজম কমে যায়। যা মুখ ও শরীরের অন্যন্য অংশে চর্বি জমার কারণ হতে পারে। এছাড়া ঠিকমতো ঘুম না হলে শরীরে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল বেড়ে যায় যেটি কি না ওজন বাড়ানোর একটি কারণ। তাই পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের চর্বি কমাতে খুবই প্রয়োজন।

৭. সোডিয়াম বা লবণ গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে আনা:

খাবারে লবণের পরিমাণ কমিয়ে আনলে সেটি শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। লবণ মূলত শরীরে অধিক পানি ধারণ ক্ষমতা সৃষ্টি করে । যা মুখমণ্ডলেও ফোলা ফোলা ভাব সৃষ্টি করতে পারে।

৮. অধিক আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ:

আঁশ বা ফাইবার যুক্ত খাবার আমাদের ক্ষুধা প্রশমিত করে । যা ওজন কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে। বিভিন্ন প্রকার শাক সবজি, ফল, গোটা শষ্যদানা প্রভৃতি খাবারে প্রচুর ফাইবার রয়েছে। আমাদের দৈনিক ২৫-৩৮ গ্রাম আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন।

তবে কেবলমাত্র মুখমণ্ডলের চারপাশে জমা চর্বি কমানোর পরিবর্তে পুরো শরীরের চর্বি কমানোর লক্ষ্যে কাজ করা উচিত। কারণ সম্পূর্ণ শরীরে চর্বি কমে গেলে মুখেরও কমবে।

সঠিক খাদ্যাভাস, কর্মচঞ্চলতা, পরিমিত ঘুম ও স্ট্রেস/মানসিক চাপমুক্ত জীবন হতে পারে মুখসহ সম্পূর্ণ দেহে জমা অতিরিক্ত চর্বি থেকে মুক্তির একটি স্থায়ী সমাধান।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সম্পর্কিত পোস্ট

আরও আরও...আর পাওয়া যায়নি.