গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের বয়স ৬০ কিংবা তারও বেশি বিশেষত যাদের আগে থেকেই বিভিন্ন রোগ আছে যেমন হৃদরোগ, হাঁপানি, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ইত্যাদি তাদের কোভিড-১৯ হলে মৃত্যুঝুঁকি অন্যান্যদের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়৷
এজন্য বাসাতে যদি বয়স্ক কোনো সদস্য থাকেন এবং তিনি যদি কোভিড ১৯ আক্রান্ত হন তাহলে তার জন্য আপনাকে একটু বেশি সচেতন থাকতে হবে।
যেভাবে একজন কোভিড-১৯ আক্রান্ত বয়স্ক সদস্যের সেবা করা যেতে পারে:
১. বাসার সবাই মিলে আক্রান্ত ব্যক্তির সেবা করা যাবে না। এতে পরিবারের বাকিদেরও আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেড়ে যাবে। বরং পরিবারের সবচেয়ে সুস্থ সবল, টিকাপ্রাপ্ত এবং অপেক্ষাকৃত তরুণদেরই আক্রান্ত রোগীর সেবা করা উচিত।
২. আক্রান্ত রোগীকে একটি আলাদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ঘরে স্থানান্তর করা জরুরি। ঘরটি যেন খোলামেলা হয় সে ব্যাপারে নজর রাখতে হবে৷
৩. সেবা দেওয়ার সময় সেবাদাতা নিজে এবং আক্রান্ত ব্যক্তি যেন মেডিকেল মাস্ক পরিধান করেন সেটা নিশ্চিত করা৷ তবে হাঁপানি বা এ জাতীয় কোনো রোগ থাকলে, আক্রান্ত ব্যক্তি মাস্ক নাও পরতে পারেন৷ সেক্ষেত্রে সম্ভব হলে অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে দেখাশোনা করা জরুরি। পাশাপাশি কোভিড আক্রান্ত রোগী যেসব জিনিস নিয়মিত ব্যবহার করেন—যেমন খাবারের প্লেট, পানির গ্লাস বা বিছানার চাদর—এগুলো অন্য কারো ব্যবহার করা যাবে না। রোগীর ব্যবহার করা জিনিসগুলো নিয়মিত সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি রোগী যেসব জায়গায় থাকবেন বা স্পর্শ করবেন সেসব জায়গাও স্যানিটাইজ করতে হবে নিয়মিত।
৪। রোগীর ব্যবহার করা রুমাল, টিস্যু বা অন্যান্য বর্জ্য অবশ্যই ঢাকনাওয়ালা ঝুড়িতে কিংবা মুখ বন্ধ করা প্যাকেটে মুড়ে ফেলতে হবে। কোনো অবস্থাতেই খোলা জায়গায় এসব বর্জ্য ফেলা যাবে না।
৫. পালস অক্সিমিটারের মাধ্যমে নিয়মিত অক্সিজেন লেভেল চেক করতে হবে। অক্সিজেন বেশি কমে গেলে বা তীব্র শ্বাসকষ্টসহ জটিলতা বৃদ্ধি পেলে হাসপাতালে নিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বাসায় অক্সিজেন দেওয়ার চেষ্টা না করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। প্রতিনিয়ত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখা এবং ডাক্তারের পরামর্শমতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে রাখা উচিত।
৬. যাদের আগে থেকেই বিভিন্ন রোগ আছে তাদের ব্যাপারে অধিক নজর রাখা৷ কারণ এই ধরনের রোগীদের অবস্থা যে-কোনো সময় খারাপ হয়ে যেতে পারে৷
৬। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তের সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখাটা খুব জরুরি। এজন্য প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শমতো ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
৭. অবস্থা খারাপ হতে শুরু করলে যেন খুব দ্রুতই হাসপাতালে নেওয়া যায় সেজন্য আগে থেকে হাসপাতালের ঠিকানা এবং অ্যাম্বুলেন্সের নাম্বার রাখা জরুরি৷
৮. যারা আগে থেকেই বিভিন্ন রোগের জন্য ওষুধ নিচ্ছেন, কোভিড-১৯ হওয়ার পর সেগুলো কীভাবে খেতে হবে নাকি খেতে হবে না সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নেওয়া৷
৯. হাসপাতালে ভর্তি করতে গেলে ডাক্তারকে রোগীর আগের রোগগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে হবে যেন চিকিৎসকগণ সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেন৷ (যেমন–কিডনী রোগীদের কোভিড-১৯ মারাত্মকভাবে আক্রান্ত করলে তখন ডায়ালাইসিস করা লাগতে পারে)।
কোভিডের টিকা দেওয়া থাকলে বয়স্ক ব্যক্তিরাও কোভিডে অনেক বেশি নিরাপদ। তাই যত দ্রুত সম্ভব আপনার পরিবারের বয়স্ক সদস্যকেও টিকার সব কয়টি ডোজ প্রদানের ব্যবস্থা করা ভালো।