জীবিকা ও দক্ষতা

পেশাগত জীবনে যে সফট স্কিলগুলো অবশ্যই প্রয়োজন

কেবল পুঁথিগত বিদ্যা নয়, একজন মানুষের দক্ষ হয়ে উঠতে কিছু চারিত্রিক ও ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যও অর্জন করতে হয়। এই বৈশিষ্ট্যগুলোই সফট স্কিল নামে পরিচিত। এই দক্ষতাগুলো একজন মানুষকে অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি থেকে শুরু করে একজন সুদক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে বেশ প্রয়োজনীয়। কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে তাই সব প্রতিষ্ঠানই এমন কাউকে বেছে নিতে চায় যার হার্ড স্কিল বা টেকনিক্যাল দক্ষতার পাশাপাশি সফট স্কিলও রয়েছে। পেশাগত জীবনে উন্নতি করতে চাইলে এর বিকল্প নেই। 

কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় এমন কিছু সফট স্কিল সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক–

যোগাযোগ দক্ষতা:

পেশাগত জীবনে আপনি যাই হোন না কেন, প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে যোগাযোগ দক্ষতা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাহক, সহকর্মী, নিয়োগকর্তা, অন্য প্রতিষ্ঠানের লোকজনসহ অনেকের সঙ্গেই আপনাকে কাজের প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে হবে। একজন দক্ষ কর্মী হতে চাইলে মৌখিক ও লিখিত–দুই ধরনের যোগাযোগেই ভালো হওয়া আবশ্যক। অর্থাৎ, আপনি যখন কিছু বলবেন তখন অপরপক্ষ যেন তা সহজেই বুঝতে পারে। আবার ই-মেইল বা এসএমএসের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে সেটিও যেন সাবলীল ও সঠিক হয়।

নিয়োগকারীরা সবসময় চান প্রতিষ্ঠানে এমন কর্মী নিয়োগ করতে যিনি সবার সঙ্গে ভালোভাবে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবেন। নিজের প্রয়োজনীয় ভাবনা বা যে উদ্দেশ্যে যোগাযোগ করছেন তাতে সফল হলে বুঝে নেবেন আপনার যোগাযোগ দক্ষতা ভালো। 

নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা:

একজন দক্ষ কর্মীর অবশ্যই নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা থাকে। এমন নয় যে পেশাগত জীবনে পা রেখেই আপনি নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবেন। তবে ভবিষ্যতে আপনি নেতৃত্ব দিতে পারবেন কি না সে বিষয়টি নিয়োগের সময়ই যাচাই করতে চান নিয়োগকারীরা। একজন কর্মীর যদি নেতৃত্বদানের ক্ষমতা না থাকে, তবে তিনি কোনো টিম বা দল চালাতে পারবেন না। তাই, প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ উঁচু পদ বা সিদ্ধান্তে তাকে রাখা হবে না। পেশাগত জীবনে যদি সফল হতে চান তবে এই দক্ষতা তৈরি করে ফেলুন।

দলগত কাজ করা:

একজন কর্মীর টিমওয়ার্ক বা দলগত কাজের দক্ষতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য সহকর্মীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা উচিত। ভালো যোগাযোগ দক্ষতা আর নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস থাকলে অবশ্যই আপনি দলগত কাজের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে নিজের সেরাটি দিতে সক্ষম হবেন। একটি প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য দলগত কাজ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। তাই তারা এমন কর্মী চান যারা অন্যের সঙ্গে মিলেমিশে কাজে সক্ষম।

বিনয়ী হওয়া:

ব্যক্তিগত এই বৈশিষ্ট্যটি পেশাগত জীবনেও খুবই প্রয়োজনীয়। একসঙ্গে কাজ করতে গেলে দলের সবার সঙ্গে ভদ্রতা ও নম্রতা বজায় রেখে কথা বলা উচিত। এতে দলে যেমন সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হবে, তেমনি অন্যের কাছ থেকেও অনেককিছু শেখার সুযোগ মিলবে। নেতৃত্ব প্রদান করা কিংবা দলগত কাজ করা–উভয়ক্ষেত্রেই এটি প্রয়োজনীয়।

সমস্যা সমাধানের দক্ষতা:

কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। কেবল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেও সমস্যার সমাধান খুঁজুন। সেগুলো জানান। এতে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। একজন দক্ষ কর্মী হতে চাইলে নিজের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে। সমস্যা নিয়ে ভাবতে হবে। সম্ভাব্য যুক্তিসম্পন্ন সমাধানের উপায় বের করতে হবে।

সৃজনশীলতা:

বর্তমানে অন্যের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে বাজারে টিকে থাকতে হয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে। তাই কর্মী হিসেবে তারা এমন ব্যক্তিদের চান যাদের মধ্যে সৃজনশীলতা রয়েছে। যারা নিজেদের আইডিয়া, ভাবনা বা পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে। পেশাগত জীবনে এই দক্ষতাটি নিজেকে অন্যদের তুলনায় বেশি যোগ্য প্রমাণে প্রয়োজনীয়।

চাপের মধ্যে থেকে কাজ করার ক্ষমতা:

কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপ থাকবেই। এটিই বাস্তবতা। অনেক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেও এই দক্ষতার কথা উল্লেখ করা হয়ে থাকে। আপনাকে চাপের মধ্যে থেকেই নির্দিষ্ট সময়ে নিজের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। সময় মেনে কাজ করেন না–এমন কর্মীর কর্মক্ষেত্রে উন্নতি তো হয়ই না বরং চাকরি টেকানোই কঠিন হয়ে পড়ে। দক্ষ কর্মী হতে চাইলে চাপ সামলে কাজ করার মানসিকতা রাখুন।

এসব বিষয়ের পাশাপাশি সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা, যেকোনো পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা, ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে চলা ইত্যাদিও পেশাগত জীবনে প্রয়োজনীয় সফট স্কিল। চাকরিপ্রত্যাশী হয়ে থাকলে নিজেকে সফট স্কিল সমৃদ্ধ করুন। পেশাজীবী হলে কর্মক্ষেত্রে নিজের সফট স্কিলগুলো প্রকাশ করুন। কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকার লড়াইয়ে এই দক্ষতাগুলো আপনাকে এক ধাপ এগিয়ে রাখবে। 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সম্পর্কিত পোস্ট