দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগী ও তাদের পরিবারের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করতে প্যালিয়েটিভ কেয়ার দেওয়া হয়। দুরারোগ্য ব্যাধি নির্ণয়, মূল্যায়ন এবং রোগের কারণে যন্ত্রণা বা ব্যথা উপশমের সব পদক্ষেপগুলো এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
মুমূর্ষু বা গুরুতর যেকোনো রোগীর উপশমকারী সেবা রোগের লক্ষণ নিরাময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। রোগীর জীবনযাত্রার বিভিন্ন প্রয়োজন মেটানো, রোগের পর্যাপ্ত ওষুধ দেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে তার জীবনের শেষ দিনগুলো শান্তিময় করার চেষ্টা করা হয়। প্রতিটি মানুষের প্যালিয়েটিভ কেয়ার নেওয়ার জন্য আলাদা প্রয়োজন ও লক্ষ্য থাকে। তাই রোগীর পরিবারকে সেবা দেওয়ার প্রশিক্ষণ, শোক বহন করার জন্য কাউন্সেলিং প্রভৃতিও প্যালিয়েটিভ কেয়ারের অংশ।
প্যালিয়েটিভ কেয়ার কাদের জন্য:
অনেক দুরারোগ্য ব্যাধির ক্ষেত্রে প্যালিয়েটিভ কেয়ার দেওয়া হয়। বর্তমানে প্যালিয়েটিভ কেয়ার সবচেয়ে বেশি দেওয়া হয় হৃদরোগ, ক্যান্সার, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, এইডস, ডায়াবেটিসের জন্য। এছাড়া কিডনি ফেইলিওর, লিভার রোগ, পারকিনসনস্ রোগ, স্নায়ুরোগ, আলঝেইমার ইত্যাদির জন্য এই সেবা প্রযোজ্য।
প্যালিয়েটিভ কেয়ার মানে শুধুই মৃত্যুপথযাত্রী রোগীর সেবা নয়। এমনকি প্যালিয়েটিভ সেবা দেওয়া মানে এই নয় যে রোগের চিকিৎসা থেমে থাকবে। গুরুতর যেকোনো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রোগের যন্ত্রণা মুক্তির জন্য প্যালিয়েটিভ কেয়ার একটি ভালো পদক্ষেপ। মুমূর্ষ রোগীর সেবা প্যালিয়েটিভ কেয়ারের একটি বডড়ো অংশ কিন্তু সবটুকু নয়।
কী সেবা দেওয়া হয়?
প্যালিয়েটিভ কেয়ারের জন্য উপযুক্ত গুরুতর রোগে আক্রান্ত রোগীদের প্রধান দুটি লক্ষণ থাকে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট। ক্যান্সার, এইডস, হৃদরোগ ও শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা জীবনের শেষ মুহূর্তে প্রচণ্ড যন্ত্রণা অনুভব করে। প্যালিয়েটিভ কেয়ারের পর্যাপ্ত পরিমাণে যথাযথ ওষুধের মাধ্যমে এই ব্যথা উপশমের ব্যবস্থা করা হয়। রোগ বা রোগের চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আরও অনেক লক্ষণ নিরাময় করা হয় এই সেবার মাধ্যমে, যেমন বমিভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, অনিদ্রা, অরুচি ইত্যাদি।
শিশুদের জন্য প্যালিয়েটিভ কেয়ার:
শিশুর গুরুতর রোগ–আক্রান্ত শিশু এবং তার পরিবারের ওপরে গভীর প্রভাব ফেলে। চিকিৎসার পাশাপাশি প্যালিয়েটিভ সেবা শিশুর কষ্ট অনেকটুকু কমাতে পারে। মনে রাখতে হবে প্যালিয়েটিভ কেয়ার মানেই মুমূর্ষু ব্যক্তির সেবা নয়। প্যালিয়েটিভ সেবার মাধ্যমে ব্যথা ও অন্যান্য লক্ষণ নিরাময়ের পাশাপাশি শিশু ও তার পরিবারকে রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করা হয়, পরিবারের সাথে সুন্দর সময় কাটানোর ব্যবস্থা করা হয়।
সেবাদানকারী পরিবারের জন্য:
পরিবারের কোনো সদস্য রোগীর সেবা দিতে চাইলে তাকে রোগের ব্যাপারে বিস্তারিত জ্ঞান, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং সাপোর্ট গ্রুপের ব্যবস্থা করা হয়। দুঃসংবাদ ও শোক মেনে নেওয়ার প্রস্তুতি ও কাউন্সেলিং করা হয় প্যালিয়েটিভ কেয়ারের অংশ হিসেবে
কেন প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রয়োজন:
প্যালিয়েটিভ কেয়ার মৌলিক স্বাস্থ্যসেবার অংশ। রোগীকে অতিরিক্ত যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করা এবং মর্যাদার সাথে জীবনের শেষ দিনগুলো কাটানোর ব্যবস্থা করা স্বাস্থ্য সেবাদানকারীদের নৈতিক দায়িত্ব। রোগ নির্ণয়ের পরপরই চিকিৎসার সাথে প্যালিয়েটিভ সেবা নিলে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব। এতে রোগীর জীবনযাত্রা সুবিধাময় হয় এবং হাসপাতাল ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা কমে। রোগ, বয়স অথবা আয় নির্বিশেষে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবার অংশ হিসেবে প্যালিয়েটিভ কেয়ার পাওয়া সবার অধিকার।
বাংলাদেশে বর্তমানে কিছু হাসপাতালে প্যালিয়েটিভ কেয়ার ইউনিট রয়েছে। এছাড়া কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্যালিয়েটিভ সেবা দিয়ে থাকে। প্যালিয়েটিভ সেবা বিশেষজ্ঞ কয়েকজন চিকিৎসক বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছেন। তবে গুরুতর রোগে সেবাদানকারী সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রশিক্ষণ থাকা জরুরি।
তথ্যসূত্র:
https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/palliative-care
https://www.webmd.com/palliative-care/when-is-palliative-care-appropriate