করােনা সংক্রান্ত তথ্য

কোন মাস্ক কীভাবে একাধিকবার ব্যবহার করতে হয়?

কোভিড-১৯ মহামারী সারাবিশ্বের সঙ্গে নতুন করে মুখের মাস্কের পরিচয় করিয়ে দিলেও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সব সময় এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। তাই স্বাভাবিক সময়েও বাইরে ব্যাপক জনসমাগমের মধ্যে গেলে বা মাত্রাতিরিক্ত ধুলোবালির পরিবেশে থাকলে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ রয়েছে তাদের।

বর্তমান সময়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বাতাসে করোনাভাইরাসের মতোই আরও অসংখ্য ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া উড়ে বেড়ায়, যেগুলো শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই সৃষ্টি করে।

ওয়ান টাইম ইউজ বা একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়ার মতো মাস্কগুলোর চেয়েও বারবার ব্যবহার করা যায় এমন মাস্কই বেশি উৎসাহিত করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, সঠিকভাবে পরিষ্কার করে যত্নসহকারে সংরক্ষণ করা গেলে দুই ধরনের মাস্কই সমানভাবে কার্যকর। আর একবার ব্যবহার করা মাস্ক যথাস্থানে না ফেলে যেখানে সেখানে নিক্ষেপ করলে পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।

আবার প্রতিদিন ব্যবহারের পর পুনঃব্যবহারযোগ্য মাস্ক ধুয়ে বা পরিষ্কার না করে আবার পরলে সেটিও ব্যক্তিতে অসুস্থ করে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ ডা. রশিদ ছোটানি।

তার মতে, “আমরা সব সময় ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ায় পরিপূর্ণ বাতাসেই বসবাস করছি। তাই সব সময় মাস্ক পরিধানের একটি সুফল অবশ্যই আছে। কিন্তু মাস্ক একদিন ব্যবহারের পর তা ধুয়ে পরের দিন আবার পরতে গেলে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। অন্যভাবে বলতে গেলে, একটা অপরিষ্কার নোংরা মাস্ক পরার অর্থ হচ্ছে প্রকৃতিতে কোভিডের বাইরেও অন্যান্য যেসব ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া প্রতিদিন ঘোরাফেরা করছে সেগুলোকে নাকের কাছে নিয়ে আসা। এই অভ্যাসের মাধ্যমে ব্যক্তি কোভিড আক্রান্ত না হলেও অন্যান্য ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া জনিত কারণে অসুস্থ্য বোধ করতে পারে।

মাস্ক প্রতিদিন সাবান বা ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়ে না পরিষ্কার করলে এর অভ্যন্তরে একধরনের তৈলাক্ত স্তর সৃষ্টি হতে পারে, যা ত্বকের ছিদ্র বা লোমকূপগুলো বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে অপরিষ্কার এসব মাস্ক চর্মরোগ, ত্বকে র্যাশ উঠা ও অন্যান্য সমস্যার কারণ হতে পারে বলে মত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সুপরিচিত ত্বক বিশেষজ্ঞ কোরি হার্টম্যান (Corey Hartman)।

মেডিকেল মাস্ক বনাম কাপড়ের মাস্ক

সাধারণ ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করার জন্য দুই বা তিন স্তর আরামদায়ক কাপড়ের তৈরি মাস্কই এখন বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু মেডিকেল মাস্ক বা সার্জিক্যাল মাস্কই সবচেয়ে বেশি সুরক্ষাদায়ক।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সিডিসির মতে, তিন স্তরের সিনথেটিক ননওভেন কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয় সার্জিক্যাল মাস্ক। এর মাঝখানের স্তরের কাপড়টি বাতাস ফিল্টারিংয়ে মূল ভূমিকা রাখে। সার্জিক্যাল মাস্ক বিভিন্ন পূরত্বের হতে পারে আবার শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বের হয়ে আসা ফ্লুয়েডগুলো ধরে রাখতে একাধিক প্রতিরোধ বলয়ও এর মাঝে থাকতে পারে।

সার্জিক্যাল মাস্কের মতোই বড় আয়োজনে তৈরি করা আরেকটি মেডিক্যাল মাস্ক হচ্ছে রেসপিরেটর।  এফএফপি২, এফএফপি৩, এন৯৫, এন৯৯ এসব নামে বাজারে রেসপিরেটর পাওয়া যায়।

ভাইরাস প্রতিরোধে অন্যান্য মাস্কের তুলনায় রেসপিরেটর বেশি কার্যকর। কেননা এখানে বাতাস ফিল্টার করার জন্য এবং ব্যবহারকারীর নিশ্বাস পরিত্যাগের জন্য কার্যকর কিছু ব্যবস্থা স্থাপন করা আছে। তবে বারবার ধুয়ে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কাপড়ের মাস্ক বেশি সুবিধাজনক; যদিও অধিক সংক্রমণ এলাকায় এর কার্যকারিতার অতটা নিশ্চিয়তা নেই।

মাস্ক যেভাবে ধৌত করতে হবে

চিকিৎসকরা বারবার ব্যবহারযোগ্য মাস্ক ধোয়ার ক্ষেত্রে অধিক ক্ষারযুক্ত সাবান অথবা ডিটারজেন্ট পাউডারকে যথেষ্ট মনে করেন। তবে গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে মাস্ক পরিষ্কার করতে পারলে তা সম্ভাব্য জীবাণু ধ্বংসে বেশি কর্যকর বলেও তাদের মত রয়েছে।

> জীবাণুমুক্ত করার জন্য মাস্ক ধোয়ার ক্ষেত্রে তা অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই করতে হবে। অর্থাৎ অপরিষ্কার বা ব্যবহৃত মাস্ক ধোয়ার জন্য হাতে নিলে সেই হাত অবশ্যই স্যানিটাইজ করতে হবে।

> আর মাস্ক রোদে শুকানোর সময়ও একটি নিরাপদ স্থান বেছে নিতে হবে, যাতে ওই অবস্থায় তা কোনো ব্যক্তির হাচি কাশি বা সংস্পর্শে না আসে।

> বারবার ব্যবহারযোগ্য মাস্ক ধোয়ার পর তা নিত্য ব্যবহার্য পোশাকের সঙ্গে না রেখে একটি কাগজ বা অন্য কোনো বাতাস নিরোধী প্যাকেটে সংরক্ষণ করতে হবে।

> অধিক ব্যবহারের ফলে খস খসে হয়ে পড়া বা মানের দিক থেকে পিছিয়ে পড়া মাস্ক ফেলে দেওয়াই উচিত।

> একটি মাস্ক একাধিক দিন নয়, অর্থাৎ প্রতিবার ব্যবহারের পর তা ধুয়ে পুনরায় ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। এটাই সর্বোচ্চ সুরক্ষার কার্যকর পথ।

> ব্যবহার চলমান থাকার এক পর্যায়ে মাস্ক খুলে টেবিলে রেখে দিলে বা পকেটে রেখে দিলে বা থুতনিতে ঝুলিয়ে রাখলে তা ধোয়া ব্যতিত পুনরায় ব্যবহার করার উপযোগিতা থাকে না।

> কেএন৯৫ মাস্ক বা এ জাতীয় রেসপিরেটরগুলো না ধুয়েও একাধিক বার ব্যবহার করার যায়। তবে এক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান করার সময় ও খুলে নেওয়ার সময়ই একটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। সেটা হচ্ছে মাস্কের উপরিভাগ বা ভেতরের অংশ হাতের স্পর্শ দেওয়া যাবে না। আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে নেওয়ার পর তা আলনা বা অন্য কোনোখানে উন্মুক্তভাবে ঝুলিয়ে রাখা যাবে না। বাতাস নিরোধী ব্যাগে করে এগুলো রাখতে হবে একান্তই নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সম্পর্কিত পোস্ট

আরও আরও...আর পাওয়া যায়নি.