খাদ্য-পুষ্টি ও জীবনযাত্রা

ওজন কমছে না কেন?

আপনি যদি ওজন কমাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে থাকেন এবং খুব কঠোরভাবে লো-কার্ব ডায়েট অনুসরণ করতে থাকেন তবুও দেখা যাবে কয়েক মাস পর

আর আগের নিয়মে আপনার ওজন কমছে না। এর কারণ আমাদের ওজন কখনও সমানুপাতিকহারে কমে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লো-কার্ব ডায়েট অনুসরণ

করার পর প্রথম ৪-৬ সপ্তাহ ওজন খুব দ্রুত কমতে থাকে। কিন্তু তারপরই ওজন কমার হার কমতে থাকে। প্রায় ৬ সপ্তাহ পরে ওজন কমা প্রায় স্থির হয়ে যায়।

এর অন্যতম কারণ হতে পারে–

১.এডাপ্টেশন বা অভিযোজন:

দীর্ঘকাল কম শর্করাযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের শরীর এতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। তখন অল্প শর্করা খেলেও ওজন আর আগের মতো কমে না বরং একটি স্থিতাবস্থা লক্ষ করা যায়।

২.হতাশ হয়ে অসচেতনভাবে খাওয়া:

দেহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়ই ওজন কমার হার স্থির হয়ে যায় কিন্তু অনেকে সেটা না জানার কারণে হতাশ হয়ে যায় এবং ডায়েট চার্ট অনুসরণ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

তাছাড়া ওজন না কমার দুশ্চিন্তাও ওজন বাড়াতে ভূমিকা রাখে।

৩.চর্বি কমছে কিন্তু পেশি বাড়ছে:

অনেক সময় শরীরচর্চার কারণে আমাদের শরীরে চর্বি ক্ষয় হয় ঠিকই কিন্তু ওজন কমে না। কারণ চর্বি যেমন কমে তেমনি মাংসপেশি তৈরি হতে থাকে।

মাংসপেশি রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আমাদের চলনশক্তি জোগায়। তাই মাংসপেশি তৈরি হয়ে ওজন না কমলে ভয় পাবার কিছু নেই।

তাই হতাশ না হয়ে ওজন কমানো ধরে রাখতে চাইলে নিম্নোক্ত কাজগুলো করা যেতে পারে–

১.উপভোগ্য ব্যায়াম নির্বাচন করা:

ওজন কমাতে আমরা যেসব কঠিন, একঘেয়ে, বিরক্তিকর ব্যায়ামগুলো নির্বাচন করি তার জন্য মোটিভেশন ধরে রাখা অনেক সময়ই প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

তাই এমন কোনো শরীরচর্চা নির্বাচন করা যেতে পারে যেটা ওজন কমানোর চেয়ে আনন্দলাভের জন্যই বেশি করতে ইচ্ছে হয়। যেমন বাচ্চাদের সাথে মাঠে

দৌঁড়ঝাপ বা খেলাধুলা করা। মোটরচালিত বাইক ব্যবহার না করে সাইকেল চালানোর অভ্যাস করা যেতে পারে। গোসলের সময় পানিতে সাঁতার কেটে গোসল

করা হতে পারে ওজন কমানোর একটি উপভোগ্য ব্যায়াম। 

২. স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া:

ওজন কমানো মানে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেওয়া না। প্রক্রিয়াজাত খাবার যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে। তবে আঁশ জাতীয় খাবার যেমন ফলমূল শাকসবজি

ইত্যাদি পুষ্টিকর খাবার খাওয়া বরং ওজন কমাতে সহায়তা করে।

৩.পর্যাপ্ত ঘুম:

কম ঘুম শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এটি ওজন বাড়িয়ে দেয়। তাই ওজন কমাতে চাইলে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

৪.মোটা দানার শস্য খাওয়া:

খুব সহজেই খাবার টেবিলে কিছু পরিবর্তন এনে ওজন কমানো যায়। যেমন সাদা চালের পরিবর্তে লাল চাল খাওয়া। রুটি বানানোর সময় মনে করে লাল আটা দিয়ে রুটি বানানো ইত্যাদি।

ওজন কমানো কোনো স্বল্পমেয়াদি কার্যক্রম না। রাতারাতি পরিবর্তন আসবে না। কিন্তু কিছু দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে নিশ্চিতভাবেই

ওজন কমিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব।

তথ্যসূত্র: 

০১। https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3810417/ 

০২। https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5452198/ 

০৩। https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5452198/

০৪। https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/22469954/

০৫। https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/32048787/

০৬। https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/24949037/ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সম্পর্কিত পোস্ট

আরও আরও...আর পাওয়া যায়নি.