প্রচলিত রােগ ও সুরক্ষা

ঘাড় ব্যথা কেন হয়?

আমরা মাঝে মাঝেই ঘাড়ে ব্যথা অনুভব করি।  কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসব ঘাড়ের ব্যথা খুব গুরুতর কিছু নয় এবং তা কয়েক দিনের মধ্যে সেরেও যায়। কিন্তু অনেক সময় ঘাড়ের ব্যথা গুরুতর আঘাত বা অসুস্থতার লক্ষণও হতে পারে।

যেসব কারণে ঘাড় ব্যাথা হয়:

১. ঘাড়ের পেশিতে টান এবং চাপ লাগলে: 

দৈনন্দিন কার্যকলাপে ভুল অভ্যাসের কারণে ঘাড় ব্যথা হতে পারে, যেমন–ভুল ভঙ্গিতে বসা বা শোয়া বা কাজ করা, অবস্থান পরিবর্তন না করে খুব বেশি সময় ধরে ডেস্কে কাজ করা, ঘুমের সময় বেকায়দায় ঘাড় রাখা এবং ব্যায়ামের সময় ঘাড়ে ঝাঁকুনি লাগা।

২. আঘাত:

পড়ে যাওয়া, গাড়ি দুর্ঘটনা এবং খেলাধুলার বিভিন্ন আঘাতে ঘাড় অধিকতর ঝুঁকিতে থাকে। অন্যদিকে ঘাড়ের হাড় (সারভাইকাল কশেরুকা) ভেঙে গেলে মেরুদণ্ডও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। হঠাৎ মাথার ঝাঁকুনি থেকে ঘাড়ের আঘাতকে সাধারণত হুইপ্ল্যাশ বা কশাঘাত বলা হয়।

৩. হার্ট অ্যাটাক:

হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হলে কিংবা রক্তচাপ অনেক বেশি বেড়ে গেলে ঘাড় ব্যথা হতে পারে, যার সাথে অন্যান্য উপসর্গগুলোও দেখা দেয় যেমন–হাঁপানি, ঘাম, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, বাহু বা চোয়াল ব্যথা। এ অবস্থায় অনতিবিলম্বে হাসপাতালে যেতে হবে।

৪. মেনিনজাইটিস:

মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডকে ঘিরে থাকে এক ধরনের পাতলা টিস্যু। এই পাতলা টিস্যুতে জীবানুর সংক্রমণ বা প্রদাহকে মেনিনজাইটিস বলে। মেনিনজাইটিসের লক্ষণগুলো হলো মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা, জ্বর। মেনিনজাইটিস জীবনঘাতি হয়ে উঠতে পারে। তাই কারো যদি মেনিনজাইটিসের লক্ষণ থাকে তবে অবিলম্বে চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে হবে।

৫. ঘাড় এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকার অসুস্থতা, যাতে ঘাড়ের পেশি বা হাড়ে বেশি চাপ পড়ে:

কিছু রোগ আছে যেগুলোতে ঘাড় এবং এর আশেপাশের পেশিগুলো দুর্বল হয়ে যায়, ফলে ঘাড়ের হাড়ের ওপর মাথার ওজন বেশি পড়ে। যেমন:

  • রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা বাত: এই রোগে ব্যথা, হাড়ের জয়েন্ট ফুলে যাওয়া এবং হাড়ের অস্বাভাবিকতা হয়। ঘাড় বা এর আশেপাশে এগুলো হলে, ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
  • অস্টিওপোরোসিস: এতে হাড় দুর্বল হয় এবং তাতে ছোটো ছোটো ফাটল হতে পারে। অস্টিওপোরোসিস প্রায়শই হাতে বা হাঁটুতে ঘটে, তবে এটি ঘাড়েও হতে পারে যার ফলে সৃষ্টি হয় ব্যথা।
  • স্পন্ডিলাইটিস: আপনার বয়স বাড়ার সাথে সাথে সার্ভিকাল ডিস্ক ক্ষয়ে যেতে পারে। এটি স্পন্ডিলাইটিস বা ঘাড়ের অস্টিওআর্থারাইটিস নামে পরিচিত। এটি কশেরুকাগুলোর মাঝে জায়গা কমিয়ে দেয় এবং জয়েন্টগুলোতে চাপ দেয়।
  • স্লিপড ডিস্ক: যেকোনো ট্রমা বা আঘাত থেকে যখন কশেরুকার একটি ডিস্ক বেরিয়ে আসে, তাতে মেরুদণ্ডের ওপর চাপ পড়তে পারে। একে হার্নিয়েটেড সার্ভিকাল ডিস্ক বলা হয়, যা ফেটে যাওয়া বা স্লিপড ডিস্ক নামেও পরিচিত।
  • স্পাইনাল স্টেনোসিস: স্পাইনাল স্টেনোসিস ঘটে যখন মেরুদণ্ড সরু  হয়ে আসে এবং তাতে চাপ পড়ে। এটি আর্থ্রাইটিস বা অন্যান্য অসুস্থতার কারণে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ থেকে হতে পারে।
  • জীবাণুর সংক্রমণ,
  • ঘাড়ের চামড়ার ওপরে বা ভেতরে ফোড়া,
  • টিউমার,
  • মেরুদণ্ডের ক্যান্সার।

তাই ঘাড়ে ব্যথা, বিশেষ করে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার ক্ষেত্রে ঘরে বসে না থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। হতে পারে, আপনার ঘাড়ে ব্যথা শরীরের অন্য কোনো জটিল সমস্যার জানান দিচ্ছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সম্পর্কিত পোস্ট

আরও আরও...আর পাওয়া যায়নি.